শাহিন আলম, টেকনাফ কক্সবাজার
টেকনাফে বৈরী আবহাওয়ায় সাগর উত্তাল। সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে ১০-১২ ফুট। এতে জোয়ারের ধাক্কায় ধসে পড়েছে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের বেড়িবাঁধের সিসি ব্লক। ফলে বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ছে শাহপরীর দ্বীপ এলাকায়। এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার মানুষের মধ্যে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্ত্বাবধানে ২০২২ সালের জুন মাসে প্রায় ১৫১ কোটি টাকা খরচে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশে প্রায় তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মিত হয়।
জোয়ারের পানি ও বড় বড় ঢেউয়ের ধাক্কায় পশ্চিম পাশের বেড়িবাঁধে লাগানো সিসি ব্লকগুলো ধসে পড়ছে। ঘূর্ণিঝড় কিংবা জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানলে বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে শত শত মানুষের ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ নানা অবকাঠামো সাগরে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত শুক্রবার থেকে এমন দৃশ্য দেখা গেছে শাহপরীর দ্বীপ এলাকায়।
বেড়িবাঁধের কাছাকাছি রয়েছে বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি। শাহপরীর দ্বীপের কয়েকটি গ্রামে রয়েছে ৪০ হাজার মানুষের বসবাস। দেখা গেছে, পশ্চিম পাশের আবুল হোসেনের বাড়ি থেকে দক্ষিণ দিকে প্রায় আধা কিলোমিটার বেড়িবাঁধের সিসি ব্লক ধসে পড়ছে। বেড়িবাঁধের অন্তত ২৫ থেকে ৩০টি এবং নিচের একাধিক অংশের আরও ২০টির বেশি সিসি ব্লক সরে গেছে। জোয়ারের ধাক্কায় মাটির বাঁধ ভেঙে গেলে পুরো শাহপরীর দ্বীপ আবারও ঝুঁকিতে পড়বে।
মাঝের পাড়া ৭নং ওয়ার্ড এলাকার রফিক মাঝি বলেন, হঠাৎ করে সাগরের পানি বেড়ে যাওয়ায় আমার বাড়িতে ঢুকে পড়ে। আমরা অনেক ভয় পেয়েছি। মাঝেমধ্যে সাগরের পানি বেড়ে গেলে বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে আমাদের বাড়িতে চলে আসে। দ্রুত মেরামত করার দরকার বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হোসেন জানান, আমার বাড়ি বেড়িবাঁধ থেকে একটু দূরে। আমি দেখতে গিয়েছিলাম সাগরের পানি বৃদ্ধি হওয়ায় গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। আমরা বিগত সময়ে অনেক কষ্ট পেয়েছি। দ্রুত মেরামত করা না হলে দ্বীপ ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে। দারিদ্রত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
বেড়িবাঁধের নির্মাণকাজে তাড়াহুড়ো ছিল বলেও মন্তব্য করেন সাবরাং ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, প্রথম দিকে বেড়িবাঁধের নির্মাণকাজ টেকসই ছিল, কিন্তু দক্ষিণপাড়া অংশে যেখানে সাগরের আগ্রাসন বেশি, সেখানে এসে তাড়াহুড়া করে কাজ শেষ করায় বাঁধের কাঠামো দুর্বল হয়েছে। বাঁধের পশ্চিমে (সাগর অংশে) প্রতিরক্ষার সিসিব্লক ঠিকমতো স্থাপিত হয়নি। যে কারণে এক বছরের মাথায় ব্লকগুলো ধসে পড়ছে। বর্ষা মৌসুমে পুরো বাঁধ বিলীন হওয়ার আশঙ্কা আছে।
টেকনাফের উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, দুই কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধের ১০০ মিটারে নতুন করে সিসি ব্লক স্থাপনের জন্য মেসার্স শহিদ ব্রাদার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।