সেলিম চৌধুরী , রংপুর :
ভিন্ন রঙের শাপলা ফুল গোলাপী, সাদা, নীল, বেগুনি রং এর হয়ে থাকে। শাপলা ফুলে ৪-৫টি বৃতি থাকে ও ১৩-১৫টি পাপড়ি থাকে। ফুলগুলো দেখতে তারার মত, কাপের সমান বৃতিগুলো ১১-১৪ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। এই শাপলা ফুলের কথা মনে হতেই একরাশ ভালোবাসা ছুঁয়ে যায় হৃদয় জুড়ে । শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। শাপলা ফুলের প্রতি আমাদের ভালোবাসা অপরিসীম। শাপলা Nymphaeaceae পরিবারের সদস্য। এটা একটি গ্রীক শব্দের অনুবাদ। প্রাচীনকালে গ্রীসে জলদেবীদের এই ফুল উৎসর্গ করে উপাসনা করতো। মানুষ এই ফুল রান্না করে এবং কাঁচা সালাদেও খেত এক সময়। এছাড়া শাপলা অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন জাতির প্রার্থনার সময় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তার মধ্যে মিশর, চীন, জাপান ও এশিয়ার বিভিন্ন এলাকা উল্লেখযোগ্য। এটি এক প্রকার জলজ উদ্ভিদ। বৈজ্ঞানিক নাম: Nymphaea. শাপলা ফুলের প্রায় ৭০ – ৮০টির মতো প্রজাতি আছে পৃথিবীতে। বাংলা ভাষায় শাপলা বা শালুক বলা হয়। ইংরেজিতে Water Lily বলা হয়, তামিল ভাষায় ভেলাম্বাল, সংস্কৃততে কুমুদ, অসমিয়া ভাষায় নাল বলে। এমন আরো অনেক নাম আছে এদের বিশ্বের অন্যান্য দেশে। শাপলা ফুল আমাদের দেশের পুকুর, হাওড়-বাওড়, নদী-নালা ও হ্রদে জন্মে। শাপলা ফুল বিভিন্ন রঙের হলেও শুধুমাত্র শাদা শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুলের মর্যাদা পেয়েছে। বাংলাদেশের পয়সা, টাকা, দলিলপত্রে জাতীয় ফুল শাপলার জলছাপ আঁকা থাকে। বর্তমানে অধিক জনসংখ্যার কারণে, জলাশয় কমে যাওয়ায় এই উদ্ভিদ দুর্লভ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ছাড়াও এই ফুল থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারে দেখা যায়। শুধু তাই নয়, ভারতে শাদা শাপলা নয়, নীল শাপলা। শাপলা ফুল রাতে পূর্ণাঙ্গভাবে ফোটে, দিনের বেলায় সঙ্কুচিত হয়।আবার কিছু প্রজাতির ফুল দিনের বেলায়ও ফোটে। এই ফুল সরাসরি কাণ্ডের সাথে যুক্ত থাকে। ফুলের কাণ্ড বা ডাঁটা পানির নিচে মূলের সাথে যুক্ত হয়ে থাকে এবং মূল জলাশয়ের নিচে ভূমিতে যুক্ত থাকে, পাতাগুলো পানির উপর ভেসে থাকে। পাতার দেখতে অনেকটা গোল, তবে এর একটি পার্শ্ব বিভক্ত আছে । পাতার রং সবুজ, পাতার প্রান্ত ঘিরে ধারালো খাঁচ থাকে। এর কলি দেখতে অনেকটা গম্বুজের মতো । এর বাইরের দিকের রং সবুজাভ। যখন ফুল ফোটে তখন ভেতরের পাপড়িগুলো ছড়িয়ে পড়ে। একটি শাপলা ফুলের স্থায়িত্ব সাত থেকে দশদিন পর্যন্ত হতে পারে। সারা বছরই শাপলা ফুল দেখা যায়। তবে বর্ষা ও শরতে এই ফুল বেশি দেখা যায়। তখন দেখে মনে হয় অসংখ্য তারা ফুটে আছে জলে। এই ফুল যেমন দেখা যায় চাষের জমিতে, তেমনই দেখা যায় বন্য এলাকায়। কাটা ধান ক্ষেতের জমে থাকা সামান্য জলে শাপলা ফুল ফুটে থাকে। পূন’ বর্ষায় শাপলা যেন প্রাণ ফিরে পায়, তখন খাল-বিল, ধানক্ষেত, পাটক্ষেত, পুকুর, নদ-নদীতে এরা রাজত্ব করে দৃষ্টিনন্দন ফুল ফুটিয়ে। তখন সে দৃশ্য যেন বর্ষাকালে অপরূপ সৌন্দর্য মহিমায় ভরিয়ে দেয়। উদ্ভিদটির গোড়ায় থাকে আলুর মতো এক ধরনের কন্দ যার নাম শালুক, অনেকে একে সবজি হিসেবে খায়। শাপলার ফল সাধারণত আমরা ঢ্যাঁপ বলে থাকি।
শাপলা বিভিন্নভাবে রান্না করে খাওয়া হয়, বিশেষ করে ইলিশ ও চিংড়ি মাছের সাথে রান্না করলে অতুলনীয় স্বাদ লাগে খেতে। শাপলার ডাঁটা ছোট করে কেটে চিংড়ি মাছ আর নারকেল বাটা দিয়ে মাখা মাখা ঝোল করে রান্না করলে চমৎকার স্বাদ লাগে খেতে। শাপলার ডাঁটা একটু লম্বা করে কেটে ইলিশ মাছ দিয়ে ঝোল করে খেতেও খুব স্বাদের। এই রকম আরও নানা পদ্ধতিতে শাপলা রান্না করে খাওয়া হয়। বর্ষাকালে শাপলা প্রচুর পরিমাণে জন্মে, তখন বাজারে বিক্রি করা হয়। সেজন্যই বর্ষাকালে আমাদের দেশে শাপলা বেশি খাওয়া হয়। গ্রাম বাংলার কিশোর-কিশোরীদের খেলার সামগ্রী শাপলা ফুল। ফুল দিয়ে ছোট ছেলেমেয়েরা গলার মালা, হাতের চুড়ি, মাথার মুকুট বানিয়ে খেলাধুলা করে। এ ছাড়া ঘর সাজাতেও শাপলা ফুল ব্যবহার করা হয়। শাপলা বাগানের জলাধারে বা অ্যাকুয়ারিয়ামে লাগানোর জন্য খুব জনপ্রিয় একটি উদ্ভিদ। বর্তমানে আমাদের দেশে অনেকে ছাদ বাগানেও এর চাষ করে থাকেন সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য। বহু রকমের ঔষধি গুণ বিদ্যমান শাপলাতে। ভারতে আম্বাল নামের আয়ুর্বেদিক ওষুধ বানাতে শাপলা ব্যবহার করা হয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে এই উদ্ভিদে ডায়াবেটিস রোগের জন্য প্রয়োজনী ঔষুধি গুণ রয়েছে। সাধারণত ফুল ও বীজ দিয়ে তৈরি ওষুধ বিভিন্ন রোগে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে হৃদযন্ত্রের শক্তি যোগানো, অতিরিক্ত পিপাসা নিবারক, প্রসাবের জ্বালা, আমাশয় ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।বিলের শাপলা ফুলের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয় বরং জীবন্ত চিত্রকর্মের মতো। বর্ষা এবং শরতে বিলে শাপলা ফুলের সমারোহ চোখে পড়ে। বিস্তীর্ণ জলরাশির মধ্যে অগণিত শাপলা ফুলের খেলা, যেখানে লাল, সাদা ও গোলাপি রঙের ফুলগুলো প্রকৃতির রূপ ফুটিয়ে তোলে।
নৌকায় চড়ে বিলের শাপলা ফুলের মাঝ দিয়ে ভ্রমণ এক অনন্য অভিজ্ঞতা। যা যান্ত্রিক শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি এনে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম করে তোলে। যেন মনে হয়, নীল জলের বুকে লাল-সাদা ফুলের আল্পনা কিংবা প্রকৃতির নিজ হাতে আঁকা এক অপরূপ ছবি। আঃ রহমানের বাড়ি রংপুর জেলার বুড়ির হাট বাহাদুর শিংহ গ্ৰামে।বয়স (৬৫) এই অসহায় বৃদ্ধের সংসার চলে পদ্ম ফুল বিক্রির টাকায়। প্রতিদিন ভোর রাতে তিনি গঙ্গাচড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বিলে পদ্ম ফুল তুলতে বের হন। ভোর রাত থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত তিনি ফুল সংগ্রহ করেন। সেই ফুল ভারে নিয়ে পায়ে হেঁটে তিনি গজঘণ্টা থেকে প্রায় আনুমানিক ১৫ কিলোমিটার দূরে রংপুর শহরে গিয়ে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সামনে ও রাস্তায় ঘুরে ফেরি করে বিক্রি করেন।
ওই ফুল বিক্রি করে তার আয় হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এ চিত্র প্রতিদিনের। তার পরিবারে স্ত্রীসহ ৭ জন সদস্য রয়েছে। ফুল বিক্রি করে যে আয় হয়, তাতেই কোনোরকমে দিনাতিপাত করছেন আঃ রহমান।
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর ) সকালে রংপুর শহরের বুড়ির হাট এলাকায় ওনার সাথে কথা তিনি বলেন, আমি ১৫ বছর যাবত অসুস্থ শরীর নিয়ে এই শাপলা ফুল বিক্রি করে কষ্টে সংসার চালাই।।