রমেক সেবা বন্ধ করতে মরিয়া সিন্ডিকেট

সেলিম চৌধুরী, রংপুর :

রমেকে উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছে হৃদরোগীরা সেবা বন্ধ করতে মরিয়া সিন্ডিকেট রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, কার্ডিওলজি বিভাগে স্থাপিত ক্যাথল্যা কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন ল্যাবরেটরি ২০১২ সালে চালু হয়।

এরপর দীর্ঘ সময় ধরে যান্ত্রিক ত্রুটিসহ নানা কারণে এর কার্যক্রম বন্ধ ছিল। রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসকদের প্রচেষ্টায় ২০১৯ সালে আবার এর কার্যক্রম চালু করা হয়। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে এর কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

রমেকে এখন ক্যাথল্যাবের চিকিৎসার সফলতা ৯৯ দশমিক ২ শতাংশ,যা অভাবনীয় বলে চিকিৎসকরা বলছেন। পুনরায় ক্যাথল্যাব চালু হওয়ায় এখন রংপুরে হৃদরোগীদের চিকিৎসা সেবা চালু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে হার্টের এনজিওগ্রাম, রক্তনালিতে স্টেন্ট (রিং) বসানো এবং পেসমেকার স্থাপনের মতো গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এ হাসপাতালে।

এতে হৃদরোগীদের চিকিৎসা ব্যয় যেমন অনেক কমেছে, তেমনি রোগীদের ভোগান্তিও লাঘব হয়েছে। 

তবে রংপুর মেডিকেলের কার্ডিওলজি বিভাগের ক্যাথল্যাব বিভাগের চিকিৎসকের এমন সফলতায় উত্তরাঞ্চলের হৃদরোগীরা খুশি হলেও টনক নড়েছে মেডিকেলের এক সিন্ডিকেটের।

হৃদরোগীরা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা পাওয়ায় আর ঢাকামুখী হচ্ছেন না।

এতেই পেটে লাথি পড়েছে সিন্ডিকেটের।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রমেকে ক্যাথল্যাব চালুর পূর্বে হৃদরোগীদের কিছু  চিকিৎসক ও দালাল মিলে ঢাকার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে পাঠাতেন একটি সিন্ডিকেট। এতে মোটা অঙ্কের কমিশন পেত এ সিন্ডিকেট।

তবে রমেকে ক্যাথল্যাব চালু হওয়ায় সেই সিন্ডিকেট  ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠেছে।

অভিযোগ উঠেছে, সেই সিন্ডিকেট এবার ৩ রোগীকে দিয়ে রমেকের কার্ডিওলজি বিভাগের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করে রমেকের ক্যাথল্যাবের সেবা বন্ধ করার চেষ্টা করছেন।

রমেক হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১১-১২ অর্থবছরে হাসপাতালে কার্ডিওলজি বিভাগে প্রথমবার ক্যাথল্যাব চালু হয়।

সে সময় দেড় শতাধিক এনজিওগ্রাম, রিং বসানো এবং পেসমেকার স্থাপন করেছেন চিকিৎসকরা।

তবে করোনার সময়ে এবং মেশিন নষ্টসহ বিভিন্ন কারণে দীর্ঘ সময় ক্যাথল্যাবের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। নতুন করে ল্যাবটি চালু হওয়ায় হৃদরোগীদের চিকিৎসা ব্যয় অনেক কমেছে।

কারণ বেসরকারি হাসপাতালে হার্টের এনজিওগ্রাম করতে খরচ হয় ১৭-১৮ হাজার টাকা।

সেখানে সরকারি হাসপাতালে খরচ হয় ২ হাজার টাকা। একেকটি রিং কিনতে ৭০ হাজার থেকে প্রকারভেদে দেড় লাখ টাকা লাগে। রিং বসাতে সরকারি হাসপাতালে খরচ হয় ২ হাজার টাকা।

সেখানে বেসরকারি হাসপাতালে রিং বসানোর চার্জ ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা এবং পেসমেকার যন্ত্রের দাম দেড় লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। পেসমেকার স্থাপনে বেসরকারি হাসপাতালে খরচ হয় ৬০ হাজার টাকার বেশি। সরকারি হাসপাতালে খরচ হয় ২ হাজার টাকা।

রমেক হাসপাতালে হৃদরোগের চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়া একাধিক রোগীর সাথে কথা বলে জানা যায় ঢাকায় হার্টে রিং

স্থাপন ব্যয়বহুল হওয়ায় সল্প খরচে 

রমেক হাসপাতালে রিং স্থাপন করে অনেকেই সুস্থ জীবন যাপন করছেন।

গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর আব্দুল জব্বার (৬০) হৃদরোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।

তার হার্টে রিং স্থাপন জরুরি হয়ে পড়ে। আর্থিক সংকটের কারণে ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারছিলেন না।

কিন্তু রমেক হাসপাতালে এনজিওগ্রাম করে নিয়মিত চিকিৎসা নিয়ে তিনি এখন সুস্থ আছেন।

হৃদরোগ নিয়ে চিকিৎসা নেয়া রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার  বড় বিল ইউনিয়নের আব্দুল বাতেন মিয়া বলেন, হৃদরোগ নিয়ে রমেকে ভর্তি হয়েছিলাম। গত ১৮ নভেম্বর আমার হার্টে রিং স্থাপন করা হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ, অনেক ভালো আছি এখন।

হার্টের সর্বোচ্চ এবং আধুনিক চিকিৎসা বলতে যা বোঝায় তা ক্যাথল্যাবে দেওয়া সম্ভব।

এখন রংপুরের হৃদরোগীদের আর ঢাকা অথবা দেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।

কম খরচে এনজিওগ্রাম, রিং বসানো এবং পেসমেকার স্থাপনের মতো গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা রমেক হাসপাতালে হচ্ছে। বর্তমানে একটি মাত্র পুরনো এনজিওগ্রাম মেশিন দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া প্রতিদিন ক্যাথল্যাব চালু রাখার সক্ষমতা থাকলেও একজন টেকনোলজিস্ট দিয়ে সপ্তাহে মাত্র দুদিন চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ডা. মাহবুবুর রহমান।

তিনি বলেন, গত দুবছরে রমেকে ৬ শতাধিক এনজিওগ্রাম, রিং স্থাপন ১০০টি, পেসমেকার স্থাপন ৫০টি ও টেমপোরারি (সাময়িক ) পেসমেকার স্থাপন হয়েছে শতাধিক।

তিনি আরও বলেন, রোগীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করে একটি ডাটা প্রস্তুত করেছেন।

তাতে দেখা গেছে, রমেকের হৃদরোগ বিভাগের এই সব চিকিৎসার সফলতা শতকরা ৯৯ দশমিক ২ ভাগ।

সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে তিন রোগীর অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিং পরানো এবং এনজিওগ্রাম খরচ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোর ৩ ভাগের ১ ভাগ হওয়ায় একটি সিন্ডিকেট ও কুচক্রী মহল এ অভিযোগ করিয়েছেন।

এই চক্রটি চায় না রংপুরে রোগীরা কম খরচে সেবা পাক।

তিনি আরও বলেন,  হার্টে রিং পরানোর এবং এনজিওগ্রাম করার সময় ক্যামেরায় রেকর্ড করা হয় সেখানে রোগীর স্বজনকে সেটা দেখিয়ে দেওয়া হয় এবং সিডি করে সেই ডিস্ক রোগীকে দেওয়া হয় সেখানে সবকিছু ক্লিয়ার দেয়া রয়েছে।

এখানে কোনো কিছু আড়াল করার সুযোগ নেই।

রমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক হরিপদ সরকার বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ক্যাথল্যাবে আমরা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছি।

ফিলিপস কোম্পানির মাধ্যমে ল্যাবটি সচল করা হয়েছে।

রংপুরের হৃদরোগীরা যাতে রংপুরে বসেই এই হাসপাতালে এসব চিকিৎসার সর্বাধিক সুবিধা পান সে লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে কার্ডিওলজি বিভাগের ক্যাথল্যাবে একটি চিকিৎসক টিম খুব দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *