জেলা প্রতিনিধি, রংপুর: রংপুর নগরীতে গত দুই সপ্তাহে ৩ দফায় বেড়েছে চালের দাম। আটাশ, উনত্রিশ, মিনিকেটসহ বস্তা প্রতি চালের প্রকারভেদে দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা। এতে মরার উপর খাঁড়ার ঘা অবস্থা মানুষের।
একজন মিস্ত্রির সাথে কথা হলে তিনি জানান, দিনে যা ইনকাম হয় তা দিয়ে দুইবেলা খাবার জোটে না। সবজির যে দাম তাতে আলুভর্তা দিয়ে এখন ভাত খাওয়া মুশকিল। তার ওপর চালের দাম বাড়ছে। এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়? বাসায় মা ও স্ত্রী অপেক্ষা করছে বাজার করে নিয়ে গেলে খাবে, সেটা তো হচ্ছে না। আবেগকে খুব কষ্টে নিয়ন্ত্রণ করে এভাবেই জীবনের কঠিন বর্ণনা দিচ্ছিলেন রাজমিস্ত্রি মোহাম্মদ শাহআলম। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধির মধ্যে নতুন করে চালের দাম বৃদ্ধির আঘাতটা নিতে পারেননি তিনি। বক্তব্যে ফুটে ওঠেছে স্পষ্টভাবে। সংসার চালানোর দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরাতে পারবেন না, তাই দিনের রোজগারের অর্ধেক দিয়ে বাসায় বৃদ্ধা মা ও স্ত্রীর মুখে ভাত তুলে দিতে মাত্র দুই কেজি চাল কিনে ঘরে ফিরছিলেন তিনি।
নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে মোহাম্মদ শাহআলম এর মত খেটে খাওয়া মানুষের এমন করুণ অভিযোগ বেশ পুরনো।
বুধবার (২৩অক্টোবর) রংপুর নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিআর-২৯ বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৪ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫৮ টাকা কেজি। স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫৫ টাকা। মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি, এক সপ্তাহ আগে ছিল ৭৫ টাকা। নাজির শাইল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগে ছিল ৭৫ টাকা কেজি।
নগরীর বুড়ির হাট বাজারে চাল কিনতে আসা অপর এক ক্রেতা মোঃ হালিম মিয়া বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশের মানুষের প্রত্যাশা ছিল কমবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। অথচ হয়েছে তার উল্টোটা। নিত্যপণ্যের বাজারের পাশাপাশি হঠাৎ কেন অস্থির হলো চালের বাজার? কে বা কারা নিয়ন্ত্রণ করে এ বাজার?
রংপুর সিটি বাজারের চাল ব্যবসায়ী মেসার্স সফুরা অটো রাইস মিলঃ এর স্বত্বাধিকারী মোঃ চাঁন মিয়া। বহু বছর ধরে পাইকারি চাল বিক্রির ব্যবসা করছেন। তিনি বলেন, চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আমাদের কোনো হাত নেই। বৃষ্টিবাদলে চালের দাম কিছুটা বাড়লেও মিল মালিকরা অবৈধভাবে মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে। চালের দাম বাড়া-কমার খেলা খেলে মিল মালিকরা। আমাদের হাতে কিছু নাই। বাজারে তো মালের সংকট নাই। অথচ বিক্রি নাই। বন্যার কারণে বাজারে সংকট সৃষ্টি করে দামটা বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা বস্তা প্রতি একটু লাভ পাইলে মাল ছেড়ে দেই।
তথ্য বলছে, রংপুর সহ হাতেগোনা কয়েকটি জেলা থেকে সারাদেশেই সরবরাহ হয় চাল। আর এসব চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে মিল মালিকরাই।ধান মজুদ, উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের কোন নিয়মনীতি না থাকায় বছর জুড়েই ধানের মজুদ ও সরবরাহ জিম্মি থাকে মিল মালিকদের হাতে। এছাড়া এ খাতে ব্যবহৃত পরিবহন ভাড়াও নির্ধারণ করে মিল মালিকরা। ফলে এর বড় প্রভাব পড়ে চালের দামে।