সম্রাট আরমান, দিনাজপুর প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় মমতাজ (প্রাঃ) ক্লিনিক এন্ড কনসালটেন্ট সেন্টার নামের এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রসূতির ইনজেকশন নবজাতকের শরীরে পুশ করার অভিযোগ উঠেছে। ঐ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নার্সের ভুল চিকিৎসায় সেই নবজাতক এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে৷
চার দিনের সেই নবজাতক খানসামা উপজেলার আংগারপাড়া ইউনিয়নের ছাতিয়ানগড় বাবুল মেম্বারপাড়ার অমল রায় ও শিউলি সরকার দম্পতির প্রথম সন্তান। বর্তমানে তাকে রংপুর প্রাইম মেডিকেলে আইসিইউ বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
রংপুর প্রাইম মেডিকেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমানে ঐ নবজাতক মেডিকেলের আইসিইউ ইউনিটের ৬ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। প্রসূতির ইনজেকশন (এনটিডি NTD) নবজাতকের শরীরে পুশ করা হয়েছে। এখনও সেই নবজাতকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এদিকে খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জানিয়েছে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মমতাজ (প্রাঃ) ক্লিনিক এন্ড কনসালটেন্ট সেন্টারের নিবন্ধন নেই। তবে নিবন্ধনের জন্য ঐ প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
নবজাতকের পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার (৩০ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৫ টা ৪৫ মিনিটে উপজেলার পাকেরহাট সরকারি কলেজের উত্তরে সবুজবাগ এলাকায় মমতাজ (প্রাঃ) ক্লিনিক ও কনসালটেন্ট সেন্টারে সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য প্রসূতিকে ভর্তি করানো হয়। পরবর্তীতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ছেলে সন্তান প্রসব করেন তিনি। এরপর চিকিৎসক প্রসূতিকে দেওয়া ব্যবস্থাপত্রে বিভিন্ন ওষুধের পাশাপাশি ইনজেকশন লিখে দেন। পরেরদিন ঐ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত নার্স সুমনা একটি ইনজেকশন মায়ের বদলে নবজাতকের শরীরে পুশ করেন। পুশ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে নীলফামারী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করান পরিবারের সদস্যরা। অবস্থার উন্নতি না হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে আইসিইউতে স্থানান্তর করেন। অবস্থার আরো অবনতি হলে রংপুর প্রাইম মেডিকেল কলেজ নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছে নবজাতক।
ঐ নবজাতকের বাবা অমল সরকার বলেন, সন্তান ডেলিভারির পর ক্লিনিকের পক্ষ থেকে আমার সন্তানকে দেওয়ার জন্য একটি ইনজেকশন নিয়ে আসতে বলা হয়। আমার বাচ্চা সুস্থ আছে ইনজেকশন কী কারণে দেওয়া হবে জানতে চাইলে তারা বলেন, এই ইনজেকশন না দিলে বাচ্চা রক্তশূন্যতাসহ ভবিষ্যতে অনেক ধরনের সমস্যায় পড়বে। পরবর্তীতে আমি ওই ইনজেকশন নীলফামারী থেকে ৩৫০০ টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে আসি। এরপর তারা সেটি আমার বাচ্চার শরীরে পুশ করে। পরে জানতে পারি আমার স্ত্রীর ইনজেকশন আমার বাচ্চাকে দেওয়া হয়েছে।
অমল সরকার কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরও বলেন, এত বড় ভুল কী মেনে নেওয়া যায়..? আমার বাচ্চার বাঁচা-মরা এখন ঈশ্বরের হাতে। এর দায় কে নেবে..? একজন সন্তানের পিতা হিসেবে আমি এর সঠিক বিচার দাবি করছি।
মমতাজ (প্রাঃ) ক্লিনিক ও কনসালটেন্ট সেন্টারের স্বত্বাধিকারী মোছাব্বের হোসেন সবুজ বিষয়টি ভুল হয়েছে স্বীকার করে বলেন, ওই নবজাতকের দেখভাল করার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা.সামসুদ্দোহা মুকুল বলেন, এরকম ঘটনা আসলেই হতাশা ও দুঃখজনক। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবার স্বাস্থ্য বিভাগে অভিযোগ করলে বা প্রতিকার চাইলে অবশ্যই আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।