ইসলামপুরে কবিরাজি চিকিৎসার নামে প্রতারণা

রোকনুজ্জামান সবুজ, জামালপুর: চটকদার প্রচারণা আর “সব মুশকিলের সমাধান”—এমন নানা লোভনীয় কথার ফাঁদে ফেলে জামালপুরে ইসলামপুর উপজেলায় ভন্ড জ্বীনের বাদশা সেজে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে আসছেন এক ভুয়া কবিরাজ।

দীর্ঘদিন ধরে সহজ-সরল মানুষের সাথে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার থেকে লাখ টাকা। এতে আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বহু মানুষ।

ভুক্তভোগীরা দাবি করছেন,এসব ভুয়া জ্বীনের চিকিৎসার বিরুদ্ধে প্রশাসনের জরুরি ও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

জানা যায়,উপজেলার নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের কামারপাড়া গ্রামের মৃত সৈয়দুর জামান ছেলে ফজলু হক আকন্দ দীর্ঘদিন ধরে জ্বীনের বাদশা কবিরাজ নামে মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে।

সন্তানহীন নারীদের সন্তান লাভ,গোপন রোগ নিরাময়, দাম্পত্য কলহ, বিয়ে না হওয়া,প্রেমে ব্যর্থতা,বাণ মারা,কুফরি করা ইত্যাদি ‘সমাধানের’ আশ্বাস দিয়ে তিনি ঝাড়ফুঁক,পানি পড়া,তাবিজ-কবজের মাধ্যমে গ্রামীণ সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,ফজলু হক আকন্দ তার নিজ বাড়িতে প্রায় পাচঁ বছর ধরে সেখানেই কবিরাজির আসর বসিয়ে রেখেছেন এবং বাড়ি আসপাশে সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করে।

তার আপন ভাগিনা ও স্ত্রীসহ এই কাজে তাকে সহায়তা করেন। জামালপুর জেলা ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকেও নিয়মিত রোগী বা আগ্রহী মানুষজন আসছেন।

স্থানীয় কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, গোবিন্দগঞ্জ বাজারে টেইলার্স দোকান থেকে এখন “ এই ভন্ড জ্বীনের বাদশা ফজলু হক আকন্দ কবিরাজির নাম করে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ঝাড়ফুঁক,তাবিজ বা পানি পড়া দিয়ে যেসব সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেন,তা কখনোই ফলপ্রসূ হয় না। মানুষ ধোঁকায় পড়ে টাকা খরচ করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, “আমরা কেউই নিশ্চিত না,উনি আসলে চিকিৎসার কিছু জানেন কিনা। তবে মানুষকে ভয় দেখিয়ে ও লোভ দেখিয়ে ঝাড়ফুঁক ও তাবিজ- কবজ,পানি পড়ার মাধ্যমে টাকা আদায় করেই তার জীবিকা চলছে। এখন তো তিনি এলাকায় একজন প্রতিষ্ঠিত কবিরাজ হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছেন,আর সেই পরিচয়ের সুযোগ নিয়ে মানুষকে ঠকাচ্ছেন।”

প্রতারণার শিকার একাধিক ব্যক্তি বলেন, “আমরা তার কথায় বিশ্বাস করে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলাম। কেউ বলেছিল পানি পড়া নিলে সন্তান হবে,কেউ বলেছিল তাবিজ-কবজ নিলে দাম্পত্য সমস্যা মিটে যাবে। কিন্তু কিছুই হয়নি। বরং টাকা খরচ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।”

তারা আরও বলেন, “এভাবে আর কতদিন চলবে? আমরা প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাই—এই ভুয়া জ্বীনের বাদশা ও কবিরাজের বিরুদ্ধে যেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”

ভুয়া কবিরাজির অভিযোগ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আল্লাহ বিশ্বাস করেন।আমাদের নবীজির কে বাণ মেরে ছিলো জানেন।প্রতি রোগি জ্বীনের সঙ্গে কথা বলে “মানুষ বিশ্বাস করে আসে বলেই আমি গাছন্ত ঔষধ, ঝাড়ফুঁক,তাবিজ ও পানি পড়া দিই। অনেকে আল্লাহর রহমতে উপকারও পায়। আমি রোগীপ্রতি হাদিয়া নিয়। এটা তো আমার পেশা।”আমার ট্রেড লাইসেন্স,কবিরাজি চিকিৎসা লাইসেন্স আছে।

এ বিষয়ে ইসলামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বলেন,সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ আসেনি। তবে অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *