জামালপুরে ইমরানের স্বাভাবিক জীবনে ফেরা নিয়ে শঙ্কায় পরিবার

ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন ইমরান।

রোকনুজ্জামান সবুজ, জামালপুর : রিক্সাচালক বাবার বড় সন্তান ইমরান। স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষকতা করতেন। ইচ্ছা ছিল লেখাপড়া শেষ করে সরকারি বা বেসরকারি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করবেন। রিক্সাচালক বাবা বেলাল হোসেনের আশা ছিল ছেলে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করে সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু সেই আশা এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
সরকার পতনের কিছুদিন আগে ঢাকার সাভারের আশুলিয়া বাইপাইল এলাকায় ফুপুর বাসায় বেড়াতে যান ইমরান। সরকারের পতনের আগের দিন ৪ আগষ্ট সন্ধায় প্রাথমিক স্কুল জীবনের বন্ধুদের সাথে আন্দোলন যোগ দেয় ইমরান। আশুলিয়া থানা মসজিদের সামনে গেলে পাশের একটি উচু বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে পুলিশ গুলি ছুড়ে। এতে ইমরানের মাথায় ৩টি গুলি লাগলে সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে । পরে আন্দোলনকারীরা ইমরানকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হ্যাপি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসা না পেয়ে ইমরানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলো পরদিন ৫ আগষ্ট সকালে মাথায় অস্ত্রপ্রচার করা হয়।
বর্তমানে ইমরান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫০২ নম্বর রুমের ১০ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন আছে। তার মাথায় খুলি আলাদা করে চিকিৎসকরা সংরক্ষণ করে রেখেছেন। ৩ মাস পরে সেটি প্রতিস্থাপন করা হবে।
ইমরানের জ্ঞান ফিরলে সে কথা বলতে পারে না। পরিবারের লোকজন ছাড়া কাউকে চিনছে না। ইমরানের স্বাভাবিক জীবন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে তার পরিবার।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ইমরানের স্বাভাবিক হতে ১-৬ বছর সময় বা তার বেশি লাগতে পারে। ইমরানের বাড়ি জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার চরসুখনগরী তালতলা মোড়ে। রিক্সাচালক বাবার ৩ সন্তানের বড় সন্তান ইমরান। পড়াশুনার পাশপাশি মাদারগঞ্জ শহরের একটি স্বনামধন্য প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক শাখার শিক্ষকতা করতেন সে। ছেলের এমন অবস্থায় হতাশায় দিন পারছে ইমরানের বাবা-মা। রিক্সাচালক বাবা বেলাল হোসেন বলেন,ছেলেটা আমার ছোট বোনের বাসাতে বেড়াতে যান। ৪ আগষ্ট তারিখ সন্ধায় আন্দোলনে যোগ দিলে পুলিশ গুলি করে। এতে তার মাথায় গুলি লাগে। অনেক স্বপ্ন ছিল আমার বড় ছেলেকে নিয়ে। এখন সেই স্বপ্নের কি হবে। আমরা গরীব মানুষ,দিন এনে দিন খাই। সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে ভালো হয়। মাদারগঞ্জের ছাত্র আন্দোলনের মুস্তাকিম রহমান বলেন,আমাদের এলাকার সন্তান ইমরান ঢাকায় আন্দোলনে গিয়ে মাথায় গুলি খেয়েছে। বিষয়টি আমরা প্রথমে অবগত ছিলাম না। আমরা আমাদের মত করে তার পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *