ভরা মৌসুমে পর্যটকদের নিষেধাজ্ঞায় খাদের কিনারে খাগড়াছড়ির পর্যটন খাত, নভেম্বরেই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার

খোকন বিকাশ ত্রিপুরা জ্যাক, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

ভরা মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা থাকায় গভীর সংকটে পড়েছে খাগড়াছড়ির পর্যটন শিল্প,সেইসাথে গভীর খাদে পড়েছে হোটেল-মোটেলগুলো। পর্যটক না আসায় এক মাসে এই ক্ষতি প্রায় ১৫ কোটি টাকা। প্রায় অসহায় হয়ে পড়েছে হোটেল-মোটেল মালিকসহ পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আশ্বাসের প্রায় দুই সপ্তাহ পার হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। দ্রুত পর্যটকদের ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট হোটেল-মোটেল মালিক ও ব্যবসায়ীরা।

সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়াও সারা বছর মুখরিত থাকে খাগড়াছড়ির জনপ্রিয় সব পর্যটন কেন্দ্র। তবে গত ১৯ সেপ্টেম্বর দীঘিনালা,খাগড়াছড়ি সদর ও রাঙ্গামাটিতে চলা সহিংসতা এবং পরবর্তী অস্থিরতা কারণে পর্যটকের সংখ্যা কমে আসে। এরপর ৮ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করায় পর্যটক আসা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়।

খাগড়াছড়ির পার্বত্য জেলার প্রধান পর্যটন কেন্দ্র আলুটিলার সুড়ঙ্গ,জেলা পরিষদ পার্ক, তৈদুছড়া ঝরনা,তেরাং তৈকালাই(রিছাং ঝর্না), মায়াবিনী লেক, মানিকছড়ির মংরাজ বাড়ি,আর্ন্তজাতিক ভাবনা কেন্দ্র, ডিসি পার্ক, পানছড়ির রাবার ড্যাম ও অরণ্যকুঠির এখনও জনমানবহীন! আর এখানকার দেড়শতাধিক

হোটেল, মোটেল ও রির্সোটে কর্মরত প্রায় ৫’শ কর্মচারী মানবেতর জীবনযাপন করছে। মালিকেরা পুঁজি খুঁইয়ে এসব শ্রমিকদের বেতন, ভাতা পরিশোধ করছেন! এছাড়াও রয়েছে পর্যটকবাহী গাড়ী এবং চালক ও সহকারীদের  জীবিকার চাকাও অচলা অবস্থা !

জানা যায়,এক মাসের বেশি সময় চলা অচলাবস্থার কারণে এরইমধ্যে লোকসান হয়েছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা।

বিকালে খাগড়াছড়ির জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র আলুটিলা, তেরাং তৈকালাই(রিসাং ঝর্না, জেলা পরিষদ পার্কসহ প্রতিটি পর্যটনগুলোতে ঘুরে দেখা যায়,পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে কোন পর্যটক নেই। এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

খাগড়াছড়ির বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে টিকআপ চালক নিপুল ত্রিপুরা বলেন, ভাড়ার গতি হারিয়েছি আজ প্রায় ১মাস হয়েছে।

গাড়ীর চাকার ওপর আমার সংসারের ৬জন সদস্য!ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা, খাবার সবমিলিয়ে এখন দিশেহারা!আমার মতো শতশত চালক,হেলপারের পরিবারে নীরব মাতম! পেশা পরিবর্তন ও সুযোগ নেই! এভাবে চলতে থাকলে সংসার চালানো আরও কঠিন হবে!

আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের ম্যানেজার চন্দ্র কিরণ ত্রিপুরা বলেন,পরিস্থিতির কারণে পর্যটক সংখ্যা খুবই কম। স্বাভাবিক সময়ে এক হাজার লোক এলেও আজ এসেছে মাত্র ১০০ জন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পর্যটক আসবে। প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে আমাদের পর্যটনের বেহাল দশা। এখন পর্যটক নেই বললেই চলে। বেতন দিতে সমস্যা হচ্ছে।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ হর্টিকালচার পার্কের

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা থোয়াই অংগ্য মারমা প্রতিদিনের বলেন,সাম্পতিক সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পর চলতি মাসের ৮তারিখ থেকে ৩১অক্টোবর পর্যন্ত বাহিরের পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়। যার কারণে আমাদের হর্টিকালচার পার্কে পর্যটক একেবারেই শূন্য। ফলে এখানকার হোটেল কর্মচারীদের বেতন,ভাতা পরিশোধ করতে প্রচুর সমস্যায় পড়েছি। আমরা আশা করি, নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে আমাদের পর্যটন খাতে সংকট নিরসন হবে। 

পাহাড়ের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিকর ছোঁয়া নিতে পর্যটকের স্রোত নামবে। খাগড়াছড়ি হোটেল ব্যবসায়ী সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক

এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা প্রতিদিনের বাংলাদেশ-কে বলেন,প্রায় মাসব্যাপি পর্যটকদের খাগড়াছড়িতে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় হোটেল-মোটেলগুলো গভীর সংকট ও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। খাগড়াছড়ির প্রায় দেড়শতাধিক হোটেল-মোটেলে পর্যটক শূন্য থাকায় কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে আমরা হিমশিম খেতে হচ্ছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। দ্রুত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে এখানকার পর্যটন,হোটেল-মোটেলগুলো আগের মতই প্রাণ ফিরে পাবে। আমরা বিশ্বাস করি আগের মতো আবারো পর্যটকের মুখরিত হবে  এই পাহাড়! পর্যটন সংশ্লিষ্টদের জীবন ও জীবিকা রক্ষায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

তিনি আরও জানান, সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে আমাদের এখানে কোনো পর্যটক নেই। আমরা কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছি না।’এদিকে ৮ অক্টোবর খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় সম্প্রীতি সমাবেশে পর্যটনের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আশ্বাস দেন পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। এরপর দুই সপ্তাহ পার হলেও সেই আশ্বাস বাস্তবায়িত হয়নি। আগামী ৩১ অক্টোবর ২৪ দিনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে৷

জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান জানান,বাইরের পর্যটকদের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। আগামী ৫ই নভেম্বর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *