মো: সোহরাওয়ার্দী সাব্বির, রাঙ্গামাটি জেলা প্রতিনিধি
গণমাধ্যমে একাধিক খবর প্রকাশের পর এবার নতুন রুট ব্যবহার করে পাহাড় থেকে পাচারের সময় পৌনে এক কোটি টাকার অবৈধ সিগারেট জব্দ করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাতে রাঙামাটির ঘাগড়া এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে সাদা পিকআপ গাড়িতে করে পাচারের সময় চোরাইপথে আনা শুল্কবিহীন এসকল সিগারেট আটক করে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। জব্দকৃত সিগারেটগুলো বিজিবি রাঙামাটি সেক্টরের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। রাঙামাটি বিজিবি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, জব্দকৃত সিগারেটগুলো তালিকা তৈরিকরে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শেষ করে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছেন, রাঙামাটি হয়ে ভারত থেকে অবৈধভাবে শুল্কবিহীন সিগারেট চট্টগ্রাম নিয়ে যাবে একটি চক্র। এমন তথ্য পাওয়ার পরপরই নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়। পরবর্তীতে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের ঘাগড়ায় একটি সাদা রংয়ের পিকআপে সিগারেট ভর্তি করা হচ্ছে এমন সুনির্দিষ্ট্য তথ্য পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে সেনাবাহিনীর একটি চৌকস টিম। ঘটনাস্থল থেকে সাদা রংয়ের পিকআপ (যাহার নাম্বার-চট্টমেট্টো-ন-১২-০১৮৯) এর মধ্যে বিদেশী অরিস ৩৮৫০ মিনি কার্টুন ও মন্ড সিগারেট ৩৩৯৫০ মিনি কার্টুন সিগারেট পায় অভিযানকারিরা। এসকল সিগারেটের আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৭৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা বলে সংশ্লিষ্ট্য সূত্র জানিয়েছে।
নিরাপত্তাবাহিনীর একটি সূত্র ও স্থানীয় সংশ্লিষ্ট্যদের সাথে আলাপ করলে নাম প্রকাশ না শর্তে তারা জানায়, বৃহস্পতিবার আটককৃত সিগারেটগুলোর মূল মালিক সুমিত্র চাকমা নামের এক ব্যক্তি। পরেশ চাকমা, পুলক্ক চাকমা ওরফে বিকাশ, বিশ্বজিৎ চাকমা, অমর চাকমা, রুপম চাকমা (সিকো), জুয়েল চাকমা, কালামন চাকমা, ত্রিরাজা চাকমা নামের এসকল ব্যক্তি এই সিগারেট ব্যবসার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। জুরাছড়ি উপজেলার সীমান্ত এলাকায় ভারত থেকে এসকল সিগারেট অবৈধভাবে রাঙামাটিতে নিয়ে আসে। এগুলো আনার সময় এবং রাঙামাটি থেকে পাচারে বিভিন্ন মাধ্যমকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব পালন করে রাজু বড়–য়া নামের এক ব্যক্তি।
তিনি সিগারেট পাচারকারিদের কাছ থেকে সকলকে ম্যানেজের নামে বিপুল অংকের টাকা নিয়ে বর্তমানে গায়ে লালকাপড় পড়ে ভিক্ষুর সাজ নিয়েছে। অপরদিকে, এই সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণ করে মঈনউদ্দিন নামের এক ব্যক্তি। তার বাড়ি রাঙামাটিতে হলেও তিনি প্রায় সময় চট্টগ্রাম অবস্থান করেন। চট্টগ্রামের কামরুল, মোর্শেদসহ আরো কয়েকজন বড় বড় চোরাকারিদের নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে তাদের মাধ্যমে এসক সিগারেট সংগ্রহ করে কোটি কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন চালিয়ে যাচ্ছে বলে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এদিকে, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের কুতুকছড়ি এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে অবৈধ সিগারেটের মজুদ করেছে একটি চক্র। সম্প্রতি এই চক্রের একটি বিশাল চালান প্রায়ে দেড় কোটি টাকা মূল্যের সিগারেট মানিকছড়ি চেকপোষ্টের কর্তব্যরত যৌথবাহিনীর সদস্যরা আটকে দিয়েছে। মৌসুমী ফল জাম্বুরার গাড়িতে করে এই এতোবিপুল পরিমাণ সিগারেট চট্টগ্রামে পাচার করতে গিয়েছিলো পাচারকারিরা। এই ঘটনায় উক্ত জাম্বুরার ট্রাকের ড্রাইভার ও হেলপারও সেসময় আটক হয়েছিলো।
বৃহস্পতিবারও একটি পিকআপে করে সিগারেটের চালান যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বেশি থাকায় এবং ঘাগড়ায় আরো একটি সিগারেটের চালান আটক হয়ে যাওয়ায় কুতুকছড়ির চালানটি আর নিয়ে যায়নি চোরাচালানিরা।
প্রসঙ্গত: সম্প্রতি রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ দিয়ে জুরাছড়ি ও বরকলের সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ সিগারেটে চালান নিয়ে আসে চোরাচালানি সিন্ডিকেট চক্র। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিজিবি’র নজরদারি বৃদ্ধিতে গত তিন মাসে আনুমানিক প্রায় ৭ কোটি টাকার অবৈধ সিগারেট শুধু রাঙামাটিতে আটক করেছে। অবৈধ চোরাচালান সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম কমাতে এবং ক্ষতিকর সিগারেট ব্যবসা বন্ধে সংশ্লিষ্ট্য প্রশাসনের আরো নজরদারি বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে স্থানীয় সচেতন মহল।