খাগড়াছড়িতে সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের সাংবাদিক সম্মেলন

খোকন বিকাশ ত্রিপুরা জ্যাক, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলা,লুটপাট,অগ্নিসংযোগ,ভাংচুর,এলোপাতাড়ি ব্রাশফায়ারে পাহাড়ি হত্যার প্রতিবাদ ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি এবং সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের প্লাটফর্ম সম্পর্কে স্পষ্টকরণের জন্য সাংবাদিক সম্মেলন করেছে সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা।

বৃহস্পতিবার(২৪অক্টোবর) সকালে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের জিরোমাইলস্থ হিল ফ্লেভারস রেস্টুরেন্টে এ সাংবাদিক সম্মেলন করেন বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা।

সংবাদ সম্মলেনে লিখিত বক্তব্যে ছাত্রী প্রতিনিধি তুষিতা চাকমা বলেন,আমরা সকল ছাত্র-জনতাকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে যুগযুগ ধরে চলা রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন-নির্যাতন ও

বৈষম্যর অবসান ঘটাতে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত জুম্ম জনগণের সম্মিলিত শক্তিসহ সারা দেশের অধিকার সচেতন প্রগতিশীল মানুষের ঐক্যবদ্ধতা, দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে পাহাড়ের অভিভাবকতূল্য আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য এবং রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণকারীদের রাজনৈতিক সদিচ্ছাই পারে পাহাড়ের সংকট-সমস্যা সমাধান করে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে। 

তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য ও বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িতদের তদন্ত সাপেক্ষে পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি জানানো হয়।  এ সংবাদ সম্মেলনে ৮দফা দাবি তুলে ধরেন বক্তারা।

এ সময় বক্তব্য রাখেন ছাত্র প্রতিনিধি কৃপায়ন ত্রিপুরা,কিকো দেওয়ান,লাব্রেচাই মারমা,পারান ধন চাকমা প্রমূখ। সংবাদ সম্মেলনে  পাহাড়ি ছাত্র প্রতিনিধিরা ৮টি দাবি পেস করেন। দাবিসমূহ-

১। বাংলাদেশের ১ম ও ২য় শ্রেণির সরকারি চাকরিসহ সকল গ্রেডের চাকরিতে ৫% আদিবাসী কোটা পুনর্বহাল।।

২।পাহাড়িদেন সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে এবং এনসিটিবি’র পাঠ্যপুস্তকে পাহাড়িদের সঠিক ইতিহাস, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, সাহিত্যসহ ইত্যাদি বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করা।

৩। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী স্থানীয় ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে জেলা পরিষদ নির্বাচন দিতে এবং আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনামলে চলা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের দুর্নীতি তদন্তপূর্বক যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহন করা।

৪। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি সমস্যার সমাধান করতে হবে এবং ১৯০০ রেগুলেশন বহাল রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা।

৫। পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং জেলা পরিষদের চাকরি নিয়োগ বাণিজ্য, অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

৬। তিন পার্বত্য জেলার ক্রীড়া সংস্থাগুলোতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পাহাড়িদের মধ্য থেকে দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়াসহ ক্রীড়াঙ্গনে দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং মাদকমুক্ত যুব সমাজ গড়তে ক্রীড়াকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে সরকারি অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে।

৭। পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক সংকট নিরসনের লক্ষ্যে যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ প্রদান এবং প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে স্ব-স্ব মাতৃভাষায় শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার মানবন্টনে মাতৃভাষায় পারদর্শীতা যাচাই করার জন্য একটি অংশ যুক্ত করতে হবে।

৮। পার্বত্য চট্টগ্রামকে সরকারি বা বেসরকারি কোন কর্মকর্তা/কর্মচারীর “পানিশমেন্ট জোন” হিসেবে ব্যবহার করার যে দৃষ্টিভঙ্গী তা পরিবর্তন ও বন্ধ করতে হবে এবং চাকরিতে পদায়নের ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *