খাগড়াছড়িতে ১১দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন কমিট

খোকন বিকাশ ত্রিপুরা জ্যাক, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :
“আমাকে ছাড়া আমার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নয়” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে খাগড়াছড়িতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন কমিটি’র উদ্যোগে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার(০৭মার্চ) সকালে খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে ক্লাবের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় নারী নেতৃবৃন্দরা বলেন,নারীকে দিতে হবে একজন পরিপূর্ণ মানুষের সম্মান ও মর্যাদা। ঘরে, বাইরে, কর্মস্থলে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, যানবাহনে, পথচলায়, উন্মুক্ত অনুষ্ঠানাদিতে নারীর সার্বিক সুরক্ষা দিতে হবে। তার স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে হবে। নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। সম্পত্তির উত্তরাধিকার এবং নিজের ও সন্তানের অভিভাবকত্বে সমান অধিকার দিতে হবে। সর্বোপরি, নারীকে ছাড়া কোনভাবেই নারীর বিষয়ে কোনরকম সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না, অর্থাৎ তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রতিটি পর্যায়ে তার সম্পূর্ণ অংশগ্রহণ এবং স্বাধীন মতামত প্রদানের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আমরা নারী মুক্তি চাই,অধিকার চাই।

এ সময় খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতি’র নির্বাহী পরিচালক ও জেলা পরিষদের সদস্য শেফালিকা ত্রিপুরা,প্রেসক্লাবের সভাপতি তরুণ কুমার ভট্টাচার্য্য,আলো এর নির্বাহী পরিচালক তরুণ চাকমা,তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা’র প্রতিনিধি মিনুচিং মারমা,মিলনপুর মহিলা কল্যাণ সমিতি’র সভাপতি ত্রিনা চাকমাসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। এ সংবাদ সম্মেলনে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের সম্পূর্ণ অংশগ্রহণ ও স্বাধীন মতামত প্রদান নিশ্চিতের জন্য ১১দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়।

দাবি সমূহ-
১.নারীর উপর যেকোনো ধরনের সংঘবদ্ধ সহিংসতা বন্ধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া।
২. সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, দাপ্তরিক বা অধিকারভিত্তিক কমিটি, রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নারীর সমান উপস্থিতি ও কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
৩. জুলাই অভ্যুত্থানের নারী সহযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি।
৪.নারী, কন্যাশিশু, আদিবাসী, প্রতিবন্ধী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও লিঙ্গবৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জাতিগত, লিঙ্গভিত্তিক, সাম্প্রদায়িক ও গণসহিংসতা বন্ধ এবং মৌলবাদী ও উগ্রবাদী সংস্কৃতির বিস্তার রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া।
৫. ধর্ষণ, যৌতুক, যৌননিপীড়ন ও উত্ত্যক্তকরণ এবং নারীর প্রতি সহিংসতাবিরোধী প্রচলিত আইনসমূহ নারীর বৈচিত্র্যময় জীবন ও বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ স্বার্থ ও সম-অধিকার বিবেচনায় সংশোধন ও পরিমার্জন করা।
৬. পাহাড়ি,ধর্মীয় সংখ্যালঘু, প্রতিবন্ধী, গৃহকর্মী, গার্মেন্টস কর্মী এবং অন্যান্য অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত নারী ও প্রবাসী নারীদের সর্বোচ্চ স্বার্থ নিশ্চিত করা।
৭. প্রতিবন্ধী নারীর জন্য গণপরিবহন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান ও বিচারব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ প্রবেশগম্য করতে হবে এবং বিশেষ সহায়তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
৮. প্রতিটি জেলায় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, নারীসহায়তা ও তদন্ত বিভাগ, কাউন্সেলিং, সাইবার সাপোর্ট ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা চালু করা।
৯. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নারীবিদ্বেষী কার্যক্রম ও প্রচার নিষিদ্ধ করতে কঠোর সাইবার আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
১০. নারীর প্রতি সহিংসতা বিরোধী আইন, নারীর অধিকার ও সহায়তা সংক্রান্ত সকল ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
১১. জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে বয়সভিত্তিক জেন্ডার সংবেদনশীলতা ও ইতিবাচক যৌনশিক্ষা কার্যক্রম চালু করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *