নোবিপ্রবিতে ছাত্রদলের আশ্রয়ে ছাত্রলীগ 

নোবিপ্রবি প্রতিনিধি 

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও কার্যক্রম চালাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নোবিপ্রবি শাখা। এরই মধ্যে গুঞ্জন উঠেছে ছাত্রলীগ নেতা কর্মীদের আশ্রয় দিচ্ছে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। 

সম্প্রতি ছাত্রলীগের সাবেক কয়েকজন নেতাকর্মী ছাত্রদলের ব্যানারে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করলে বিষয়টি সামনে আসে। জানা যায়, গত ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে নোবিপ্রবি ছাত্রদলের ব্যানারে বেশ কয়েকটি প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়। সেই প্রোগ্রামগুলোতে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখা যায়। 

গত ১৩ অক্টোবর “নোবিপ্রবি ছাত্রদল” এবং “নোবিপ্রবি ছাত্রদল অফিসিয়াল” এই দুইটি ফেসবুক পেজে ছাত্রদলের সাম্প্রতিক কার্যক্রমের ছবি পোস্ট করা হয়,যেখানে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।পরবর্তীতে এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হয়। 

সরেজমিনে দেখা যায়, পূর্বের ছাত্রলীগের কর্মীরা ছাত্রদলের বিভিন্ন সভা এবং মিটিং এ অংশ নিচ্ছে। তাদের মধ্যে আছে ব্যাবসায় প্রশাসন বিভাগের নাঈম উল্লাহ (২০১৮-১৯), বাংলাদেশ এন্ড মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিস বিভাগের সৈয়দ সাদনান মোজাম্মেল ইফতি(২০২০-২১), বাংলাদেশ এন্ড মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিস বিভাগের রুদ্র মোহাম্মদ রিফাত (২০২০-২১), ব্যাবসায় প্রশাসন বিভাগের কাইফ হাসান (২০২১-২২)। 

জানা যায়, এদের মধ্যে বাংলাদেশ এন্ড মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিস বিভাগের সৈয়দ সাদনান মোজাম্মেল ইফতি নোবিপ্রবির আব্দুল মালেক উকিল হল ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ছিলো। পরবর্তীতে, ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পূর্বে সে পদত্যাগ করে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, রুদ্র মোহাম্মদ রিফাত এবং সৈয়দ সাদনান মোজাম্মেল (ইফতি) ছাত্রলীগের মধ্যে উগ্র ছিলো না। তারা তৎকালীন সভাপতি নাঈম রহমানের অনুসারী ছিলো। এমনিতে তারা নিয়মিত মিছিল মিটিংয়ে থাকতো, তারা হলের সিট পলিটিক্সের জন্য ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলো। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য আরেক শিক্ষার্থী বলেন, কাইফ হাসান বিবিএ ফ্যাকাল্টির সিনিয়রদের সাথে ঘোরাঘুরি করতো। যদি বিবিএ ফ্যাকাল্টির সম্পূর্ণ কমিটি দিতো তাহলে তার নাম আসার সম্ভাবনা ছিলো। কাইফ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান শুভর অনুসারী ছিলো। 

এছাড়া ছাত্রদলের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী কৃষি বিভাগের জাহিদ হাসান (২০১৩-১৪ সেশন) নামে এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধেও ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গ্রুপগুলোতে ছড়িয়ে পড়া কিছু ছবিতে দেখা যায় জাহিদ হাসান গোপালগঞ্জে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে বঙ্গবন্ধুর কবরে ফুল দিচ্ছে। 

পরবর্তীতে ফেসবুকে তিনি এর বিপক্ষে নিজের অবস্থান জানিয়ে লিখেন, যদি কখনো গোপালগঞ্জ যাই, মরহুম শেখ মুজিবের জন্য দোয়া করে আসব, ছবি তুলে ফেসবুকেও দিব। আমাদের রাজনৈতিক ভিত্তি এতোটা দুর্বল নয় যে সারাদিন কান্নাকাটি করে আমাকে ছাত্রলীগ বললেও তা কেউ বিশ্বাস করবে। ষড়যন্ত্রের ছবিতে বিদ্যমান ফেইসগুলোকে একে একে জিজ্ঞেস করলেও তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। আমাদের নেতা তারেক রহমানও শেখ মুজিবের কবরে গিয়ে দোয়া পড়েছেন, উনিও কি আওয়ামীলীগ হয়ে গেছে?জনতার মেয়র ইশরাকও দোয়া করেছেন সেখানে গিয়ে, এরকম অসংখ্য বিএনপির নেতাকর্মী তা করেছেন। এটাই বিএনপির রাজনীতির সৌন্দর্য। বিএনপি প্রতিহিংসা, প্রতিশোধের রাজনীতি করে না, পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সৌন্দর্য, সম্প্রীতির রাজনীতি করে। এটাই সুস্থ সুন্দর রাজনীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নোবিপ্রবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব সাহারাজ উদ্দিন জিহান জানান, আমরা দীর্ঘদিন যাবত শোষন এবং জেল জুলুমের শিকার ছিলাম। তো সব কিছু নিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সাথে ইন্টারেকশন ছিলো না। এখন অনেকেই তাদের পরিচয় গোপন করে আমাদের মধ্যে আসছে,যেকারনে আমাদের চেনার সুযোগ হয় নাই। তো কারো ব্যাপারে যদি এরকম প্রোপার এলিগেশন থাকে তাহলে আমরা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো। অলরেডি আমরা নাঈম উল্লাহ নামের এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। 

নোবিপ্রবি ছাত্রদলের আহবায়ক মো. নুর হোসেন বাবু এ ব্যাপারে বলেন, নাঈম উল্লাহ সম্পর্কে আমরা জেনেছি। সে আমাদের জুনিয়র, যেহুতু জুনিয়র এবং ছাত্রলীগের কোন পোস্টেড নেতা ছিলো না তাই আমরা এ ব্যাপারে জানতাম না। আমাদের একটা জুনিয়রের সাথে বাহিরের একটা প্রোগ্রাম করেছে নাঈম। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি প্রকাশিত হওয়ার পরে জেনেছি যে ও ছাত্রলীগ করতো। তখন আমরা ওর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছি এবং ওর ব্যাপারে আমরা একটা বিবৃতি দিয়েছি যে এ ধরনের ছাত্রলীগের কাছে আমাদের সংগঠনের সম্পর্ক নাই এবং তাদের জন্য জায়গাও নাই। কারন তারা ক্যাম্পাসে নানান ধরনের অপরাধে লিপ্ত ছিলো, এখন এখানে এসে নিজেকে সেফ করবে বা সুবিধা নিবে একারনে আসছে। এ সুযোগ আমরা দিবো না। এছাড়াও আমাদের গ্রুপে বা আমাদের সাথে ছাত্রলীগ আছে এরকম প্রমান আমরা পাই নাই। যদি পেয়ে থাকি তাহলে আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নিবো। এ ব্যাপারে আমাদের জিরো টলারেন্স।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *