চট্টগ্রামে (এইচপিভি) ভ্যাকসিন পাবে সাড়ে তিন লক্ষ কিশোরী

সুমন চৌধুরী চট্টগ্রাম (প্রতিনিধি)

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধের লক্ষ্যে সারাদেশের ন্যায় আগামী ২৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার থেকে চট্টগ্রাম জেলায় অনুষ্টিত হবে মাসব্যাপী জাতীয় হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকাদান ক্যাম্পেইন-২০২৪।

শুক্রবার ও সরকারী ছুটির দিন ব্যতীত মোট ১৮ দিনের প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত জেলার ১৫ উপজেলার ৪ হাজার ৩৮৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫ম-৯ম শ্রেণির ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৩৩০ জন কিশোরী ও স্কুল বহির্ভূত কমিউনিটির ৭ হাজার ৫১৮ জন কিশোরীসহ সর্বমোট ৩ লাখ ৫১ হাজার ৮৪৮ জন কিশোরীকে এইচপিভি ভ্যাকসিন প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিশোরীদেরকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই ব্যয়বহুল এইচপিভি টিকা প্রদান করা হবে।

১৭ ডিজিটের জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন ও জন্মনিবন্ধন বিহীন কিশোরীদেরকে হোয়াইট লিস্টিংয়ের মাধ্যমে ক্যাম্পেইনের প্রথম ১০দিন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র সমূহে এবং পরবর্তী ৮ দিন স্থায়ী ও অস্থায়ী কেন্দ্রসমূহে কিশোরীদেরকে এইচপিভি টিকা দেয়া হবে। এ ভ্যাকসিনে কোন ধরণের ঝুঁকি বা বন্ধ্যাত্ব হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এইচপিভি ভ্যাকসিনের অপপ্রচার বা গুজব রোধে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

আগামী ২৪ অক্টোবর সকাল ৮টায় নগরীর জামালখানস্থ ডা. খাস্তগীর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিভাগ, মহানগর ও জেলা পর্যায়ে এ ক্যাম্পেইনের শুভ উদ্বোধন করবেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব।

সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বিত উদ্যোগে জাতীয় এইচপিভি টিকাদান ক্যাম্পেইন সফল করা হবে। এ লক্ষ্যে আমাদের সকল প্রস্তুুতি রয়েছে। জাতীয় এইচপিভি টিকাদান ক্যাম্পেইন উপলক্ষে আজ ২২ অক্টোবর মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত জেলা পর্যায়ের সাংবাদিক ওরিয়েন্টেশনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমওসিএস ডা. মোঃ নওশাদ খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সাংবাদিক ওরিয়েন্টেশনে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এসআইএমও ডা. এফ.এম জাহিদুল ইসলাম। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমওডিসি ডা. মোঃ নুরুল হায়দার, এসএমও (ম্যালেরিয়া) ডা. মোহাম্মদ আবুল কালামসহ দপ্তরের বিভিন্ন স্তরের কর্মচারীরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

সিভিল সার্জন বলেন, জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে এইচপিভি টিকা বিশ্বব্যাপী পরীক্ষিত, নিরাপদ ও কার্যকর। এক ডোজ এইচপিভি টিকা নিলে জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যাবে। এটি কৈশোরকালীন স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দিগন্ত। বাংলাদেশে প্রতি বছর হাজার হাজার নারী জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করছে। এই মারাত্মক রোগ প্রতিরোধে বর্তমান সরকার সারাদেশে আবারও বিনামূল্যে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে।

১০-১৪ বছর বয়সী কোন কিশোরী কেউ যাতে এ টিকা থেকে বাদ না পড়ে সে বিষয়ে বিশেষ নজর রাখা হবে। ইপিআই ভ্যাকসিনের মধ্যে এইচপিভি সবচেয়ে দামী। এবারের লক্ষ্য হলো ৯৫ শতাংশ কিশোরীকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা। এইচপিভি ভ্যাকসিন কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি রয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ২ জন সমন্বয়ককে কমিটিতে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সিভিল সার্জন আরও বলেন, আগামী ২৪ অক্টোবর থেকে দেশের সাতটি বিভাগে কিশোরী ও ছাত্রীদের মাঝে এই টিকাদান কর্মসূচি শুরু হচ্ছে, যা চলবে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত। এ ক্যাম্পেইন সফল করতে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সমূহে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের ৯০ শতাংশকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *