খোকন বিকাশ ত্রিপুরা জ্যাক, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :
“নারী ও কন্যা শিশুর বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করতে একত্রিত হউন” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে ১৬দিনের প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে খাগড়াছড়িতে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উদযাপন কমিটি’র উদ্যোগে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিবাদ দিবস উপলক্ষ্যে মানববন্ধন ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই ১৬দিনব্যাপি প্রচারাভিযান ২৫নভেম্বর থেকে ১০ডিসেম্বর পর্যন্ত।
সোমবার সকালে খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনের পরপরেই জেলা শিল্পকলা একাডেমি’র হলরুমে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিবাদ পক্ষ উদযাপন কমিটি’র আহ্বায়ক নমিতা চাকমা’র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রুমানা আক্তার।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রুমানা আক্তার বলেন,প্রত্যেক নারীকে কোন না কোনভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এই সমস্যা আগেও ছিল,এখনো আছে,ভবিষ্যতেও থাকে। তবে আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। আমাদের প্রত্যেককে ১৮বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে না দেয়া। নারীদেরকে নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াতে হবে। নিজেই সচেতন হতে হবে এবং স্বাবলম্বী হতে হবে। নারীদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে। আমাদের নারীরা বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূূমিকা পালন করতে হবে।এছাড়াও আমাদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ অবস্থান তাদের সহযোগী হিসেবে এগিয়ে আসতে হবে।
এ সময় আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিবাদ পক্ষ’র সদস্য সচিব গীতিকা ত্রিপুরা’র সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য শেফালিকা ত্রিপুরা,জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সুষ্মিতা খীসা,জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বিশ্বজিৎ চাকমা,খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (অবঃ) ত্রিনা চাকমা,তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা’র নিঅবাহী পরিচালক রিপন চাকমা, কাবিদাং এর নির্বাহী পরিচালক লালসা চাকমা প্রমুখ।
এছাড়াও বটতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক(অবঃ) নবকুমার চাকমা,উইমেন্স এক্টিভিস্ট ফোরামের সদস্য উখি চাকমাসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।
এদিকে মানববন্ধনে নারী প্রতিনিধিরা বলেন,পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার কারণে ভুক্তভোগীরা বিচার যেমন পাচ্ছে না, নির্যাতন/সহিংসতার রাশও টেনে ধরা যাচ্ছে না। বাল্যবিয়ে বন্ধে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণীত হয়েছে,কিন্তু আইনের শিথিলতাকে ব্যবহার করে এবং আইন ও সমাজচক্ষুকে ফাঁকি দিয়ে নানা ছদ্ম আবরণে দেদারসে বাল্যবিয়ে হচ্ছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে এখনো হয়রানি-নির্যাতন প্রতিরোধে কোনো নীতিমালা ও কমিটি নেই, যেগুলোতে আছে সেগুলোরও সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন আছ। নারীদের পথেঘাটে, পর্যটনস্থলে, যানবাহনে,অনলাইনে নারী ও মেয়েদের প্রতি যে ধরনের প্রকাশ্য সহিংসতার ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে, তা গণ-পরিসর থেকে হটিয়ে নারীদের পুনরায় গৃহবন্দি করবার প্রয়াসজাত পরিকল্পিত উদ্যোগ বলে মনে হয়। সমাজে যে নারীবিরোধী মানসিকতা বদ্ধমূল হয়ে আছে, তা দূর করবার জন্য পথে নারীর যে অগ্রযাত্রা তা ভণ্ডুল হয়ে যাবে। নারীর প্রতি সহিংসতা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন। এর পক্ষে কোনো অজুহাতই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি বন্ধ করতে অতি অবশ্যই আমাদের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। তবে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের দায় কেবল রাষ্ট্র ও সরকারের নয়। এ দায় সমাজের সবার। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তারা।