খাগড়াছড়িতে তিন ইউপিডিএফ সদস্যকে গুলি করে হত্যা, বৃহস্পতিবার সকাল-সন্ধ্যা অবরোধের ডাক

খোকন বিকাশ ত্রিপুরা জ্যাক, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পানছড়ি উপজেলার লতিবান রঞ্জন পাড়ায় চুক্তি বিরোধী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর একটি সশস্ত্র ডেরায় ব্রাশফায়ার করেছে পার্বত্য চুক্তি পক্ষ পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (জেএসএস)।

স্থানীয় সূত্রের তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, বুধবার (৩০ অক্টোবর) ভোর ৪টা ৪৫ মিনিটে জেএসএস সন্তুর ৪০ সদস্যের একটি সশস্ত্র গ্রুপ লতিবান এলাকার গহীন অরণ্যে অবস্থিত ইউপিডিএফ প্রসিত গ্রুপের সশস্ত্র ডেরায় ব্রাশফায়ার করে।

বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা গেছে, ব্রাশফায়ারে ইউপিডিএফ ৩ সদস্য নিহত, আহত হয়েছে ২ জন। এসময় ১টি একে-৪৭ অস্ত্র ও ১ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা রেখে পালিয়ে যায় ইউপিডিএফ সদস্যরা।নিহতরা ইউপিডিএফ সহযোগী অঙ্গসংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সদস্য বলে জানা গেছে।

নিহতরা হলেন পানছড়ি উপজেলার লতিবান ইউনিয়নের  সিজন চাকমা (৫০), ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের নতুন বাগান প্রকল্প পাড়ার শাসন ত্রিপুরা(৩৫) ও জয়েন চাকমা(২২)।

ইউপিডিএফ সদস্য নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে জেএসএস একটি সূত্র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইউপিডিএফ ৩ সদস্য নিহত হওয়ার বিষয়টি চাউর হয়েছে। 

এ ঘটনা ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) কেন্দ্রীয় কমিটি’র প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নিরন চাকমা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে খাগড়াছড়ির পানছড়িতে তিন ইউপিডিএফ কর্মীকে হত্যার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এছাড়াও ইউপিডিএফের তিন কর্মীকে হত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি জেলায় সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ ঘোষণা করা হয়।

ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা বলেন সকাল ১০টার দিকে হাসিনার আমলে সৃষ্ট ঠ্যাঙাড়ে নব্যমুখোশ বাহিনীর একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার লতিবান ইউনিয়নের শান্তি রঞ্জন পাড়ায় ইউপিডিএফ কর্মীদের

ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এতে ইউপিডিএফের তিন জন কর্মী। সিজন চাকমা, শাসন ত্রিপুরা ও জয়েন চাকমা ঘটনাস্থলে নিহত হন। পার্বত্য চট্টগ্রামে ঠ্যাঙাড়ে নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীদের এখনো হাসিনা সরকারের নিয়োজিত বাহিনীরাই মদদ দিয়ে যাচ্ছেন। নব্য মুখোশ সন্ত্রাসীরা আরো বেপরোয়া হয়ে ইউপিডিএফ নেতা-কর্মী

হত্যায় মেতে উঠেছে। এর আগে গত বছর এই সন্ত্রাসীরা পানছড়ির পুজগাঙে বিপুল চাকমাসহ চার জনকে হত্যা করলেও তাদের বিরুদ্ধে সরকার-প্রশাসন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

তিনি আরও জানান, ইউপিডিএফ নেতা অবিলম্বে পানছড়িতে তিন ইউপিডিএফ কর্মীকে হত্যার সাথে জড়িত নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারপূর্বকদৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, হাসিনার আমলে নিয়োজিত ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত সেনা কর্মকর্তাদের প্রত্যাহারের দাবি জানান।

স্থানীয়রা জানান,ইউপিডিএফ নিয়ন্ত্রিত পানছড়ি এলাকার দখল নিতে জেএসএস বিগত বছর ধরে সশস্ত্র হামলার চেষ্টা করে আসছে। সে সূত্র থেকে এই হামলার ঘটনা ঘটতে পারে।  আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে পাহাড়ের দু’টি আঞ্চলিক দল ১৯৯৭ সনের ২-রা ডিসেম্বরের চুক্তির পর থেকে সংঘর্ষে লিপ্ত। এসব সংঘর্ষে ইউপিডিএফ ও জেএসএসের পাশাপাশি পাহাড়ের সাধারণ মানুষ বলি হচ্ছে। সেই সাথে পাহাড়ের শান্তি-সম্প্রীতি বিনষ্ট হচ্ছে।

পানছড়ি থানার অফিসার্স ইনচার্জ মো. জসীম উদ্দিন জানান,এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় আমরা বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে নিহত তিনজনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।এলাকার বর্তমান পরিস্থিতি উত্তপ্ত বিরাজ করছে।এ ঘটনায় যদি কেউ অভিযোগ বা মামলা করেন,তাহলে অভিযোগের ভিত্তিতে  আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *