
স্টাফ রিপোর্টার : একটি ঐতিহাসিক বিল্পবের মাধমে স্বৈরাচারি আওয়ামী সরকারের পতনের পর শিল্পকারখানা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মালিকরা ভেবেছিলেন এবার হয়তো সকল অপশক্তির হাত থেকে মুক্তি মিলেছে। কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও তা বেশি দিন পেরোয়নি।
ময়মনসিংহের ত্রিশালে শিল্প কারখানাগুলোতে আধিপত্য বিস্তার ও ব্যবসা নিয়ন্ত্রনে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সোহান নামে এক ছাত্রদল নেতা।
চাঁদাদাবি ও ব্যবসা নিয়ন্ত্রনে নিতে চার কোম্পানির ম্যানেজারদেরকে হত্যাসহ নানাভাবে হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই নেতার বিরুদ্ধে।
ওই ঘটনায় ত্রিশাল থানায় দুটি কোম্পানির পক্ষ থেকে পৃথকভাবে সাধারন ডায়েরি করলেও এখনো কোন ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।
এদিকে একটি লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার তাকে কারন দর্শানোর নোটিস দিয়েছে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা ছাত্রদল।
উপজেলার আমিরাবাড়ী ইউনিয়নের বগার বাজারের আশপাশের এলাকায় গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি শিল্পকারখানা।
স্বৈরাচারি আওয়ামী সরকারের পতনের পর ওইসব কোম্পানিগুলোতে অপর অপশক্তি যেন ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ঝুটসহ অন্যান্য ব্যবসা বাগিয়ে নিতে তৎপর হয়ে উঠেছে আমিরাবাড়ী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আশিকুর রহমান সোহান।
এ ছাত্রদল নেতা আমিরাবাড়ীতে প্রতিষ্ঠিত ড্রেসডেন টেক্সটাইল, সিপি বাংলাদেশ কোম্পানি লিঃ, দবির উদ্দিন স্পিনিং মিল ও নাফপু কোম্পানি ব্যবসা করার সুযোগ দিতে চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে। সেখানে আধিপত্য বিস্তারে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে কোম্পানিগুলোর ম্যানেজারদেরকে রিতিমত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
এসব ঘটনায় নিরাপত্তার কথা ভেবে ১৯ মে ড্রেসডেন টেক্সটাইল লিমিটেড এর পক্ষ থেকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. শিহাব শাহরিয়ার ও ২৬ মে সিপি বাংলাদেশ কোম্পানি লিঃ এর প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহবাজ ইব্রাহিম সানি বাদী হয়ে ত্রিশাল থানায় সাধারন ডায়েরি করেন।
সিপি বাংলাদেশ কোম্পানি লিঃ এর সাধারন ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয় যে, স্থানীয় আব্দুস সালামের ছেলে ছাত্রদল নেতা আজিজুর রহমান সোহান (২৫) আমাদের কোম্পানিতে এসে তাকে এখাসে ব্যবসা করতে দিতে হবে বলে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হুমকি দেয়। সর্বশেষ ২৫ মে কোম্পানির বাইরে একটি চা-স্টলে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহবাজ ইব্রাহিম সানিকে হত্যার হুমকিও দেয় সোহান।
তিন হাজার শ্রমিকের কর্মপ্রতিষ্ঠান ড্রেসডেন টেক্সটাইল লিমিটেড এর সাধারন ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয় যে, ছাত্রদল নেতার পরিচয়ে সোহান আমাদের কারখানার জুটের ব্যবসা নিয়ন্ত্রনে নিতে কর্তৃপক্ষকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। গত ২৪ এপ্রিল কারখানা থেকে জুটের গাড়ি বের হওয়ার সময় আটকে দেয়ার হুমকি দেয় সোহান। শুধু তাই নয় এই এলাকায় ব্যবসা করতে দেবে না বলেও হুমকি দেয়া হয়। হুমকি-দামকির কারণে কারখানা পরিচালনা করা দুষ্কর হয়েছে বলেও তাতে উল্লেখ করা হয়।
বাদীদের অভিযোগ, নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়ার ঘটনায় সাধারন ডায়েরি করলেও থানা পুলিশ এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তবে পুলিশ বলছে, জিডির তদন্ত করলে বিজ্ঞ আদালতের অনুমতি লাগে। তদন্তের জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে।
এদিকে কোম্পানির পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগও দেয়া হয় জেলা ছাত্রদলের কাছে। এর প্রেক্ষিতে ২৯ মে বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা ছাত্রদল সোহানকে কারন দর্শানোর নোটিস দেয়।
সঠিক ব্যাখ্যা দিতে না পারলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে জানান ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা ছাত্রদল সভাপতি আজিজুল হাকিম আজিজ।
দবির উদ্দিন স্পিনিং মিল এর এজিএম সেলিম আহমেদ জানান, বিভিন্ন ইস্যুতে আমার কাছে চাঁদা দাবি করতো সোহান। এরপর আমি যখন তার ফোন ধরিনা,তখন সে আমাকে মেসেজে লিখে “একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না” ? যখন মেসেজের রিপ্লাই দিচ্ছিলাম না, তখন সে আবার লিখে, “আপনি নাকি তারেক জিয়ার নামে বাজে মন্তব্য করেন” কোন রিপ্লাই দেইনি। পরদিন লিখলো, “আপনার লোক মনে করে একজনকে আটকাইছিলাম, পরে শুনি সে আপনার লোক নয়”। এরপর তার নম্বর আমি বøক করে দেই।
শাহবাজ ইব্রাহিম সানি এই প্রতিবেদককে জানান, ভয়ভীতি ও হুমকির ঘটনায় ২৬ মে ত্রিশাল থানায় জিডি করেছেন তিনি। কোন ব্যবস্থা তো দুরের কথা, এখনো কেউ আসেনি।
মো. শিহাব শাহরিয়ার বলেন, ওই নেতার হুমকি-দামকিতে অতিষ্ঠ বিভিন্ন কারখানার কর্মকর্তারা। অনেকটা আতঙ্কের মধ্যে বাইরে চলাফেরা করতে হয় আমাদেরকে। পুলিশ এখনো কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
এসব বিষয়ে ছাত্রদল নেতা সোহানের ভাষ্য, এসব কর্মকর্তারা আওয়ামীলীগের লোক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। তারা কি চাঁদাবাজী বা হুমকির প্রমাণ দেখাতে পারবে ?।
তদন্ত কর্মকর্তা ত্রিশাল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শেখ গোলাম মোস্তফা রুবেল জানান, তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হোক, তারপর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ত্রিশাল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনসুর আহমেদ, তদন্তের জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। আদালত অনুমতি দিলে আমরা তদন্ত করবো।
