ইসলামপুরে ঘুষ ছাড়া দলিল রেজিস্ট্রি করেন না সাব-রেজিষ্ট্রার

ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি: জামালপুরের ইসলামপুরে ঘুষ ছাড়া কোনো দলিল রেজিস্ট্রি হয় না বলে অভিযোগ উঠেছে সাব রেজিস্টার আয়েশা সিদ্দিকার বিরুদ্ধে।
জানা যায় সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, দলিল লেখক সমিতিসহ স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চলছে অনিয়ম দূর্নীতি ও এ ঘুষ বাণিজ্যের কর্মযজ্ঞ। সেবা প্রত্যাশীরা জমি রেজিস্ট্রারী করতে এলে সরকারের নির্ধারিত ফির পরিবর্তে ‘সমিতি’ নির্ধারিত টাকা দিতে হয় দলিল লেখকদের ।
জামালপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, গত রবিবার তার পরিবারবর্গদের নিয়ে একটি বন্টন নামা দলিল করতে যায় ইসলামপুর সাব রেজিস্টার অফিসে। সরকারি নিয়ম অনুসারে সকল ফী পরিশোধ করে দলিল কাজ সম্পন্ন করতে যায় আয়েশা সিদ্দিকার নিকট। তখন তিনি বলেন আগামীকাল আপনার দলিলটি সম্পাদানের কাজ সমাপ্ত করবো। পরদিন তারা অফিসে গেলে দলিল লেখকের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে দলিল এন্ট্রি হবে না। নিরুপায় হয়ে ভুক্তভোগীরা দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
ইনতাজ আলী জানায় শিক্ষিত মানুষই যখন ছাড় নাই,তখন সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষকে বাধ্য হয়েই সরকার নির্ধারিত ফির চাইতে কয়েকগুণ বেশি টাকা গুনতে হয়। এতে ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা।

সম্প্রতি কয়েকটি জাল দলিল নিবন্ধন বাতিল হওয়ার পর দলিল লেখকদের নানা অপকর্মের চিত্র অসহ্য হয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন ভুক্তভোগীরা। তাদের অভিযোগ, এখানে ঘুষ ছাড়া কোনো দলিল রেজিস্ট্রি হয় না। রেজিস্ট্রার খাতায় সিরিয়ালে কাটা কাটি এসব দেখার কেউ নেই।
সভুকুড়া এলাকার রাসেল মিয়া জানায় সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে দলিল লেখকরাই দলিল করার সময় অফিস খরচের অজুহাতে বাড়তি টাকা নেন। দলিলের ফি ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করলেও সেরেস্তা ফির নামে অতিরিক্ত টাকা ছাড়া অফিস সহকারী (কেরানি) কোনো দলিল এন্ট্রি করেন না। তার চাহিদা মতো টাকা না পেলে বিভিন্ন কাগজপত্রের অজুহাতে হয়রানি করা হয়। আবার টাকা পেলে সব বৈধ হয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দলিল লেখক জানান, ‘সেরেস্তা ফি না দিলে সীমাহীন হয়রানির স্বীকার হতে হয়। আর কাগজপত্রে ঝামেলা থাকলে ৩০থেকে ৫০হাজার বা আরও অধিক টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়।’

দলিল লেখক সমিতির সভাপতি বলেন, ‘প্রতি দলিল থেকে সমিতির নামে চাঁদা নেওয়া হয় এটা মিথ্যা কথা। তবে সেরেস্তার নামে কিছু টাকা দেওয়া হয়।’
অফিস সহকারী রহিমা বেগম বলেন, ‘আমি শুধু সিরিয়াল নম্বর দিয়ে স্যারের কাছে দলিল পাঠিয়ে দিই। তবে অফিসের বিবিধ খরচ বাবদ সামান্য টাকা রাখা হয়।’
উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার আয়েশা সিদ্দিক বলেন, এই অফিসে কোন টাকা লেনদেন হয় না। ‘অফিসে যোগদান করেছি ৯ বছর হয়েছে তাই অনেক কিছুই জানা আছে । তবে অফিসে কোনো সিন্ডিকেট নেই। অফিস সহকারী দলিল এন্ট্রির সময় টাকা আদায়ের বিষয়ে আমার জানা নেই। এ বিষয় খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *