ওসি কামালের পরিবারের নামে শত কোটি টাকার সম্পদ, বিলাশবহুল বাড়ী-গাড়ী

জামালপুর প্রতিনিধি :

পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ সরকারের প্রভাবশালী ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানা ও ডাকার  টঙ্গী পূর্ব থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ মোঃ কামাল হোসেন ওরফে ওসি কামাল তিনি দায়িত্বে থাকাকালীন তার পরিবারের স্ত্রী, মেয়ে, ভাই, মা বাবার নামে ও বেনামে   শত কোটি  টাকা ও অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। 

গাজীপুর এর হোতাপাড়া ও মনিপুরে তার স্ত্রীর নামে রয়েছে কয়েক একর জমি। তার শ্বশুর বাড়ী শেরপুর জেলার শ্রীবরদীতে স্ত্রীর নামে শেরপুর পৌরসভা সংলগ্ন গোপাল বাড়ীতে মেয়ের নামে এবং রাজবাড়ীতে ভাই ও মা বাবার নামে ক্রয় করেছেন কয়েক কোটি টাকার জমি। বেনামে গাজীপুরে একটি রিসোর্ট পরিচালনা করছেন বলেও জানা গেছে। ওসি কামাল হোসেন তার স্ত্রী উম্মে রোমান এর নামে ঢাকা উত্তরার ৯ নং সেক্টরে বিলাশবহুল একটি ৮ তলা বাড়ী করেছেন যার অধিকাংশ সরঞ্জামাদি বিভিন্ন দেশ থেকে ক্রয় করেছেন। এছাড়াও তার রাজ বাড়ীর  নগর বাথান এ ঝিলিক মঞ্জিল নামে বিশাল একটি ডুপ্লেক্স বাড়ী  ও বেনামে ঢাকাতে বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট রয়েছে। ওসি কামাল হোসেনের পরিবার একাধিক গাড়ী ব্যবহার করলেও গাড়ীগুলোর রেজিস্ট্রেশন একাধিক ব্যক্তির নামে। তার ছোট মেয়ে ঝিলিক চলাচল করেন প্রায় কোটি টাকা দামের কালো রংয়ের একটি হ্যারিয়ার গাড়ীতে যার রেজি নং- ঢাকা মেট্রো ঘ ১৭- ৫৭৬৬ । তার স্ত্রী চলাচল করেন একটি এক্স করোলা ও অন্য একটি টয়োটা ফিল্ডার গাড়ী  দিয়ে। টয়োটা ফিল্ডার গাড়ীটির রেজি নং ঢাকা মো্েট্রা  গ ২৮-৭২০৫।

ওসি কামাল হোসেন তার সৎ মেয়ে কনক চাপার নামে শেরপুর প্রধান ডাকঘরে ৪০ লক্ষ টাকার সঞ্চয়পত্র ও ৩০ লক্ষ টাকার এফডিআর ক্রয় করেন। এছাড়াও শেরপর আইএফআইসি ব্যাংকে ৩০ লক্ষ টাকার এফডিআর ক্রয় করেন। এই ব্যাংকের টাকার অর্থের  উৎসের জায়গায় ওসি কামাল হোসেন তার শ্বাশুরীর নামে ক্রয়কৃত ৩৫ লক্ষ টাকার একটি সঞ্চয়পত্রের কাগজ দাখিল করেন। তার শ্বাশুরীর নামে ক্রয়কৃত সঞ্চয়পত্রের নম্বর গসপ-চ-০২৬৮৫১১-৫১৭ (৭ টি যার প্রতিটি  ৫ লক্ষ টাকা) তারিখ ১৫/০১/২০১৫। কামাল হোসেন তার সৎ মেয়ের বাবার নামের জায়গায় নিজের নাম না দিয়ে তার সৎ মেয়ের মৃত বাবা আবুল কাশেম এর নাম ব্যবহার করেছেন।

ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানার অফিসার ইনচার্জ কামাল হোসেন ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ পুলিশে এস.আই পদে যোগদান করে। রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার নগর বাথান গ্রামের নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের এই পুলিশ সদস্য পিএসআই পিরিয়ড অতিক্রম না করেই তার চেয়ে বয়স্ক এক বিধবা মহিলাকে দুই সন্তানসহ বিয়ে করেন । সেই বিধবা মহিলার মৃত স্বামী রিটার্য়াড ওয়ারেন্ট অফিসার ছিলেন। মৃত্যুর  পূর্বে তেমন কিছু রেখে যেতে না পারলেও এই পুলিশ দম্পত্তি বর্তমানে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

ওসি কামাল হোসেন কালো টাকা সাদা করার বৈধ পন্থা হিসাবে তার স্ত্রীর নামে ০৬ একরের একটি মাছের প্রজেক্ট পরিচালনা করেন। এটি শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার গোসাইপুর ইউনিয়নের রহমতপুর মৌজায় ৩৭০,৩৭১,৩৭২,৪৮১,৪১৯ নং দাগে অবস্হিত। এখানে তেমন কোন মাছের উৎপাদন না করলেও আয়কর ফাইল ভারী করার জন্য এই মাছের প্রজেক্টটি কাগজে কলমে ব্যবহার করছেন। একজন ওসির স্ত্রী হয়েও বছরে কয়েক বার সিঙ্গাপুর যান ঘুরতে ও চিকিৎসা করতে। মেয়েরাও বিভিন্ন দেশ ভ্রমন করেছেন। সিঙ্গাপুর এর মালাবার থেকে ক্রয় করেছেন শত ভরির উপর স্বর্ণালংকার।

টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি থাকাকালীন উচ্চ পদস্হ কিছু ঘুষখোর পুুলিশ অফিসার, স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ সরকারের প্রভাবশালী কয়েকজন মন্ত্রী ও স্হানীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের সহায়তায় তার স্ত্রীর নামে বিভিন্ন লাইসেন্স করে শুরু করেন চাদাঁবাজি। সেই সময় তার মেয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে একাধিক মন্ত্রীসহ বিশিষ্ট শিল্পপতিরা উপস্থিত ছিলেন। ওসি কামাল বিভিন্ন মন্ত্রীদের প্রভাব খাটিয়ে গাজীপুরের বিভিন্ন গার্মেন্টসে তার স্ত্রীকে দিয়ে  জুটের ব্যবসা শুরু করান। গাজীপুরের এমসি গার্মেন্টস, গাজীপুর এর বিশিষ্ট শিল্পপতি মায়ের দোয়া রিয়েল এস্টেট এর মালিক মোঃ কামরুজ্জামানসহ অনেক ব্যবসায়ীদের সাথে তার রয়েছে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা। যেগুলো সব পরিচালনা করেন তার স্ত্রী উম্মে রোমান। ওসি কামাল তার ছোট ভাই ময়নুল ইসলামের নামেও অসংখ্য ব্যবসা করে যাচ্ছেন। ওসি কামাল হোসেন তার চাকরী জীবনে আওয়ামীলীগ প্রভাবশালী মন্ত্রীদের ছত্রছায়ায় থেকে সব সময় তার পছন্দ মত থানা বেছে নিয়েছেন। কোন ওসি এক থানায় ২ থেকে ৩ বছরের বেশী না থাকলেও তিনি যত দিন ইচ্ছে এক থানায় ততদিন চাকুরী করেছেন আবার বদলীর সময় প্রয়োজনে কাউকে সরিয়ে সেই চেয়ার দখল করেছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মসিংহের ভালুকা থানা থেকে ওসি কামাল হোসেনকে ত্রিশাল থানায় বদলি করা হয়। সে সময় তার বিরুদ্ধে নৌকার পক্ষে প্রচারণার অভিযোগ উঠে এবং নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়। সেটি সে সময় প্রায় সব পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এত স্পর্শকাতর একটি অভিযোগের পরও এই ওসি কামাল হোসেনকে ত্রিশাল থানা থেকে কেউ বদলি করতে পারেনি এমনকি নির্বাচন কমিশনও এই কামাল হোসেনের ক্ষমতার কাছে পরাজিত হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর সারা দেশের পুলিশ সদস্যরা যখন নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার বদ্ধ ঠিক সে সময়েও ওসি কামাল হোসেনের ফেসবুক ওয়ালে সাবেক যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রীর সাথে একটি হাস্যোজ্বল ছবি ছিল।ওসি কামাল হোসেন (বিপি ৭৭৯৯০৩৮৭৮৭)। বর্তমানে ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) হিসেবে বঙ্গবন্ধু সেতু (পূর্ব)  নৌ ফাড়ি, টাঙ্গাইল এ কর্মরত আছেন। নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে  জনবান্ধব পুলিশ প্রশাসন এখন সময়ের দাবী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *